Admission
জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র - মেন্ডলিয়ান ইনহেরিট্যান্স

মেন্ডেলিয়ান ইনহেরিট্যান্স (Mendelian Inheritance):

মেন্ডেল বিপরীত বৈশিষ্ট্য (alternative character) যুক্ত দুধরনের মটরশুঁটি গাছ (Pisum sativum) নিয়ে তাঁর পরীক্ষা শুরু করেছিলেন। এক ধরনের উদ্ভিদ ছিল লম্বা (tall), অন্য শ্রেণির উদ্ভিদ ছিল খাটো (dwarf)। পরীক্ষা শুরু করার আগে তিনি মটরশুঁটি গাছের বিশুদ্ধতা পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর শুদ্ধ লক্ষণযুক্ত হোমোজাইগাস) একটি লম্বা উদ্ভিদের সঙ্গে শুদ্ধ লক্ষণযুক্ত একটি খাটো উদ্ভিদের কৃত্রিম পরাগসংযোগ ঘটান। লম্বা উদ্ভিদের পরাগরেণু (pollen) নিয়ে খাটো উদ্ভিদের গর্ভমুন্ডে স্থাপন করা হলো। পরাগসংযোগের ফলে উৎপন্ন বীজ থেকে যে সব উদ্ভিদ আবির্ভূত হলো) তা সবগুলোই লম্বা। প্রথম পরাগসংযোগের ফলে সৃষ্ট উদ্ভিদগুলোকে মেন্ডেল প্রথম বংশধর (first filial generation) বা F অনুরূপে চিহ্নিত করেন। পরে মেন্ডেল F জনুর উদ্ভিদগুলোর মধ্যে সংকরায়ন (hybridization) ঘটান। দ্বিতীয়বার পরাগসংযোগের ফলে সৃষ্ট দ্বিতীয় বংশধর (second filial generation)-এ বা F2 জনুর মোট ১০৬৪ উদ্ভিদের মধ্যে ৭৮৭টি লম্বা এবং ২৭৭টি খাটো পাওয়া গেল, অর্থাৎ লম্বা ও খাটো উদ্ভিদের অনুপাত দাঁড়ালো ৩ঃ১।
মেন্ডেলের পরীক্ষাগুলো (প্রতিক্ষেত্রে) একজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত মটরশুঁটি গাছের মধ্যেই সংঘটিত হয় এবং এ ধরনের পরীক্ষাকে মনোহাইব্রিড ক্রস (monohybrid cross) বা একলক্ষণ সংকরায়ন বলা হয়। পরবর্তীতে মেন্ডেল দুজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত মটরশুঁটি গাছ নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেন। একটি শুদ্ধ লক্ষণযুক্ত হলুদ-গোল বীজ উৎপন্নকারী উদ্ভিদের সাথে অপর একটি শুদ্ধ লক্ষণযুক্ত সবুজ-কুঞ্চিত বীজ উৎপন্নকারী উদ্ভিদের পরাগসংযোগ ঘটানোর পর দেখা গেল F, জনুর সবগুলো উদ্ভিদই হলুদ-গোল বীজ উৎপন্ন করতে সক্ষম। কিন্তু F2 জনুতে ১৬টি বংশধরের মধ্যে ৯টি হলুদ-গোল, ৩টি হলুদ-কুঞ্চিত, ৩টি সবুজ-গোল ও ১টি সবুজ-কুঞ্চিত বীজ উৎপন্নকারী উদ্ভিদ পাওয়া গেল। মেন্ডেলের এ পরীক্ষাকে দুজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত উদ্ভিদের মধ্যে সংঘটিত) ডাইহাইব্রিড ক্রস (dihybrid cross) বা ছিলক্ষণ সংকরায়না বলে।) মেন্ডেলের উপরোল্লিখিত গবেষণা ও ফলাফল সামগ্রিকভাবে মেন্ডেলিয়ান ইনহেরিট্যান্স নামে পরিচিত।

মেন্ডেল তাঁর পরীক্ষার জন্য মটরশুঁটি গাছকে নমুনা হিসেবে মনোনীত করার কারণ-
১. মটরশুঁটি গাছ একবর্ষজীবী হওয়ায় অতি সহজেই বাগানের জমিতে ও টবে ফলানো যায়।
২. মটরশুঁটি গাছের প্রতিটি জনুর আয়ুষ্কাল স্বল্প হওয়ায় খুব কম সময়ের মধ্যেই সংকরায়ন পরীক্ষার ফল পাওয়া 
৩. ফুলগুলো আকারে বড় হওয়ায় মটরশুঁটি গাছে অতিসহজেই সংকরায়ন ঘটানো যায়। যায়।
৪. মটরশুঁটি গাছে একাধিক সুস্পষ্ট তুলনামূলক বিপরীত বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
৫. এ গাছের ফুল উভলিঙ্গ হওয়ায় সহজেই স্বপরাগায়ন ঘটানো যায়। ৬. সংকরায়ণে সৃষ্ট বংশধরগুলো উর্বর (fertile) প্রকৃতির হওয়ায় নিয়মিত বংশবৃদ্ধি করতে পারে।

Content added By